01/10/2023
দাওয়াত ও সদস্য সংগ্রহ মাসে দেশের সচেতন শিক্ষার্থীদের প্রতি দাওয়াতী মাসের আহবান
প্রিয় ভাই।
যখন আপনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর এই প্রচারপত্রটি পড়ছেন; তখন নিশ্চয়ই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনি আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। ব্যাংকে টাকা নেই! রিজার্ভে ডলার নেই! নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে! আদালতে ন্যায়বিচার নেই! বাংলাদেশের চিরায়ত সংস্কৃতি সহমর্মিতা, মায়া-ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতার মতো সামাজিক পুঁজিগুলো বিলুপ্তির পথে! মোটের উপর বলতে গেলে সর্বত্র অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে দেশের নাগরিক মাত্রই মনে প্রশ্ন জাগে এমন বাংলাদেশ কি আমাদের প্রত্যাশিত ছিল? খুন, গুম, মিথ্যা মামলা, বিদেশে অর্থ পাচা ব্যাংক লুটপাটের মত অনৈতিক দেশে সেকেন্ড হোম / থার্ড হোম ও পাচার, বিভিন্ন দেশে চরম অপরাধমূলক কার্যক্রম এখন আরও বীভৎস রূপ নিয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বকীয়তা হারিয়ে সরকারের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। সরকারও নিজের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। ফলে যা সরকার তা রাষ্ট্র এবং যা রাষ্ট্র তা সরকারে পরিণত হয়েছে। কোথাও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইনসাফ নেই। ভোট ও ভাতের অধিকার নেই। এক কথায় আমাদের সমাজ ও দেশের জনগণ ইতিহাসের সবচেয়ে অস্থির সময় পার করছে।
প্রিয় বন্ধু!
এভাবে একটা সমাজ ও রাষ্ট্র চলতে পারে না। আমরা চলতে দিতে পারি না। যদি এখনো সমাজ ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকে, এখনো জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, যদি এখনো জনগণকে ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়, তাহলে কিভাবে আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়? এত শত সমস্যা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে একটি কার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে আপনি কি বিবেকের কোন তাড়না অনুভব করেন না? আমাদের উপমহাদেশে দীর্ঘ সময় অপরাজনীতি চর্চার ফলে এবং আত্মকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ফলে সামগ্রিকভাবে তারুণ্যের মাঝে রাজনীতির ভীতি ও অনীহা তৈরি হয়েছে। 'আই হেইট পলিটিক্স' একটি ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে। অথচ সমাজ-বাস্তবতা, তত্ত্ব, দর্শন, শিক্ষা-সাহিত্য, ক্যারিয়ার, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মত জীবনঘনিষ্ঠ সবকিছুর ওপর রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। আপনি রাজনীতি অপছন্দ করে দূরে থাকলেও রাজনীতি ঠিকই আপনার জীবনকে ষোলআনা নিয়ন্ত্রন করে। অন্যদিকে অসাধু ও অশিক্ষিত লোকজন রাজনীতির মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নেতৃত্ব দখল করে।
প্রিয় সুহৃদ
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। বিদায় হজের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই পূর্ণাঙ্গ রূপের মাঝে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্র সবকিছুই শামিল। মানব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুই ইসলাে মর আলোচ্য বিষয়। ইসলাম মানুষের দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. মদিনা হিজরতের পর ইসলামী রাষ্ট্র অস্তিত্ব লাভ করে। হিজরতের পর মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা হয়ে গেল ১০ লক্ষ বর্গমাইল। পরবর্তী ৩০ বছরে চার খলিফার শাসনামলে ইসলামী রাষ্ট্রের আয়তন দাঁড়ায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ বর্গমাইলে । একটু ভেবে দেখেন তো, আয়তন টা কতটা বাংলাদেশের সমান?
ইসলাম রাজনৈতিকভাবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রায় সাড়ে তেরোশত বছর, ১৯২৩ সাল পর্যন্ত। থিবীর ইতিহাসে এমন কোন সভ্যতা আপনি খুঁজে পাবেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে পথিবীর নেতৃত্বে মুসলিম শাসনামলে শুধু মানুষ নয় প্রতিটি সৃষ্টি সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দে বসবাস করতে পেরেছে। নারীরা পেয়েছিলো তাদের ন্যায্য অধিকার ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবনব্যবস্থা। সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ ভোগ করেছিলো রাষ্ট্রীয় সমঅধিকার। রাসূলুল্লাহ সা. এর হাত ধরে গড়ে উঠেছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক পৃথিবী। পৃথিবীব্যাপী ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। গোটা বিশ্বমানবতার ত্রাহী আর্তনাদ মিলিয়ে গিয়েছিলো কল্যাণের বাতাসে। আজ আমরা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত। তবে মুসলমানদের বিজয়ের ধ্বনি আবারও নতুন করে শোনা যাচ্ছে। এখন আমাকে-আপনাকে একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের সেই সোনালী ইতিহাস-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সজাগ ও সোচ্চার হতে হবে।
প্রিয় ভাই।
রাজনীতি যেহেতু মানুষের জন্য, সংগঠন যেহেতু আগামীর সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির জন্য। সেহেতু আমরা চিন্তা করেছি যদি মানুষ না বাঁচে তাহলে কিসের রাজনীতি, আর কিসেরই বা সংগঠন! তাই মানবিক কাজ ও আগামীর প্রজন্মের বহুমাত্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ছাত্র রাজনীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাশীল দেশপ্রেমী প্রজন্ম তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দক্ষতার পাশাপাশি নৈতিকতা --সমৃদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের রয়েছে নানাবিধ কর্মসূচি। অন্যদিকে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জাগতিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক সচেতন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতেও রয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মসূচি। রাজনীতির সহিংস ধারা পরিবর্তন, ছাত্রবান্ধব বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে সরব উপস্থিতি, পেশাভিত্তিক জনশক্তি তৈরি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজ, ভিনদেশী সংস্কৃতির আধিপত্য রোধে ইসলাম বিধৌত বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এখন এক অনন্য নাম সচেতন শিক্ষার্থীদের আস্থার ঠিকানা।
আমরা এক নতুন বাংলাদেশ ও নতুন পৃথিবীর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে থাকবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ইনসাফ, পরস্পর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সততা। তাই আমাদের এই অপ্রতিরোধ্য পথচলায় আপনাকেও স্বাগতম। আমরা আপনার অপেক্ষায়.......
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ
৫৫/বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন : ০২-২২৩৩৮৭১৩১