
19/09/2024
"ছাত্র ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গি"
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অগ্নি গর্ভে জন্ম নেওয়া বুর্জোয়া শাসন-শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা বিপ্লবী ধারার ছাত্র গণ সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। আকাশ থেকে পড়া বা হঠাৎ জন্ম নেওয়া কোনো সংগঠন নয় ছাত্র ইউনিয়ন। এর পিছনে রয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানীদের শোষণের ইতিহাস। আজ ৬৫ বছরের ইতিহাসে এর জ্ঞান ভাণ্ডারে জমা হয়েছে দীর্ঘদিনে আন্দোলন সংগ্রামের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। যা আমাদের পথ দেখায়, স্বপ্ন দেখায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের দারিদ্র বাবা-মা ও বোনের উপর যখন ধর্ষণ ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে আসে কি সামাজিক বা ব্যক্তিগত ভাবে তখন সোচ্চার হতে।
আমরা রাজনীতি করতে চাই না। পড়াশোনা করতে চাই, গবেষণা করতে চাই কিন্তু এই বুর্জোয়া রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করে না। বুর্জোয়া শিক্ষাদর্শনে যাদের টাকা আছে শুধু মাত্র তারাই পড়াশোনা করতে পারে। তাই আমরা অনেকেই পেটি বুর্জোয়ার সন্তান হলেও দারিদ্র মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ কাজ করে। ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে দান খায়রাত করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার মত লোক আমরা নই। আমরা সামগ্রিক ভাবে স্থায়ী পরিবর্তন চাই। আমরা উপলদ্ধি করি- আমাদের বই, খাতা, কলম তৈরি করে শ্রমিকেরা। প্রতিদিন যে খাবার খাই, কাপড় পড়ি, গাড়ীতে যাতায়াত করি এবং যে গাছপালার অক্সিজেন নিচ্ছি তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য জ্ঞান রয়েছে। "নিজে ভালো তো জগৎ ভালো" এই মিথ্যা প্রবাদবাক্য মানতে পারি না। আমাদের বেড়ে উঠার পিছনে যে মানুষ গুলোর অবদান আছে তা আত্মকেন্দ্রিক মানুষের মত অস্বীকার করতে পারি না।
তাই সংগঠিত হই যখন কোন বোন ধর্ষিতা হয়, যখন রাষ্ট্র সুন্দরবন ধ্বংস করতে চায়, যখন ধর্মের নামে অন্য ধর্মের মানুষদের হত্যা করা হয়, যখন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কম রাখা হয়। আমরা সোচ্চার হই যখন ন্যায়ের প্রতীক ভাস্কর্য সরানো হয়। আমরা এমনি এমনি সংগঠিত হই না এর পিছনে থাকে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের নির্মম নির্যাতন। এই শোষক রাষ্ট্র ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চাই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যেখানে প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন বিকাশের সুযোগ পাবে। প্রত্যেকে অন্যের ক্ষতি না করে নিজ নিজ ধর্মের চর্চা করতে পারবে। ছাত্র ইউনিয়ন নাস্তিকদের সংগঠন নয়। তবে অধার্মিকদের ঘৃণা করাও আমাদের রুচিবোধে বাঁধে। আমরা প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
আমরা নারীপুরুষ কে সামাজিক ভাবে আলাদা করে ভাবি না। আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক নারীপুরুষ সামাজিক মানুষ। কাজকে আমরা নারীর কাজ বা পুরুষের কাজ বলে বিবেচনা করি না। আবার জৈবিক ভাবেও নারীপুরুষে ভিন্নতা অস্বীকার করি না। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- আমরা নারীপুরুষের জৈবিক নয়, সামাজিক সহাবস্থান চাই।
আমরা এইটাও চিন্তা করি না এই বু্র্জোয়া রাষ্ট্র আমাদের দাবি মেনে নিবে। এদের চরিত্রে মানার মানসিকতা নেই। এই রাষ্ট্র যতই মুলা ঝুলাক আমরা জানি প্রত্যেক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত শিক্ষার বিকল্প একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিক শিক্ষাদর্শনের চর্চা করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আমাদের সংগঠন, ছড়িয়ে দিতে হবে নীল পতাকা। যে শহীদদের নামে রক্তের শপথ পাঠ করেছি তাদের সাথে প্রতারণা করতে পারি না। যে প্রগতিশীল মানুষ গুলো তাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ নিজের জীবন দিয়ে গেছে তাদের অসমাপ্ত কাজের পথ আমরা ত্যাগ করতে পারি না। তাই রাষ্ট্রের ভিতর রাষ্ট্র, সমাজের ভিতর সমাজ তৈরি করতে চাই। পারলে; তবেই তো ছাত্র ইউনিয়ন নিজেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করবে।